সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কোন্দল অনেক আগে থেকেই রয়েছে। তবে অন্য দলের নেতাদের সাথে শত্রুতার চেয়ে নিজ দলের ভেতর গ্রুপিং এখানে বেশী। দলের প্রতিপক্ষকে দাবাতে চেষ্টা চালানোর অভিযোগ এখানে বড় দু’টি দলের মধ্যেই রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপিতে এ কোন্দল কখনও কমেনি। করোনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ল্যাং মারার রাজনীতি করছে কেউ কেউ।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শহরে দুটি বলয় উত্তর-দক্ষিণ হিসেবে পরিচিত। তবে বলয়ের নাম পরিবর্তন না হলেও কখনও কখনও নেতাদের অবস্থানের পরিবর্তন করতে দেখা গেছে। কোন নেতা এক সময়ে উত্তরের রাজনীতি করেন আবার পরবর্তীতে দক্ষিণের সাথেও মিলেন। এ অবস্থা অনেক আগে থেকেই। স্বাধীনতার আগে নিজের পরিবারের রাজনীতিককে সরাতে অন্য এলাকার লোকজনকে শেল্টার দেয়ার কথা শোনা যায় উত্তর বলয়ে। পরবর্তীতে শেল্টার পাওয়া সেই লোকজনই তাদের বিরোধী হয়ে উঠে। পারিবারিকভাবে উত্তর-দক্ষিণ বলয় এখনও টিকে আছে ওসমান পরিবার ও চুনকা পরিবারের মধ্যে। ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে এ রেষারেষি আরও বাড়ে। শামীম ওসমানকে নির্বাচনে হারিয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র হওয়ার পর তাকে নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। তার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে ফেস্টুন ঝুলানো, দুর্নীতির অভিযোগ এনে মানববন্ধন, হকার ইস্যু নিয়ে হামলাও হয়। টেলিভিশনের টক শো’তে প্রকাশ্যে শামীম ওসমান ও আইভীর মধ্যে বাদানুবাদের চিত্র দেশবাসী দেখেছে।
নারায়ণগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতেও কোন্দল ও বলয় রয়েছে একাধিক। একজনকে কুপোকাত করতে কয়েকজন মিলে বিনিয়োগের ঘটনাও শোনা যায়। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার কে পদ থেকে সরাতে বিএনপির কয়েকজন শিল্পপতি নেতা দলের হাই কমান্ডের কয়েকজন নেতাকে খুশী করেছিলেন বলে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। খুশীর মাত্রা এতটাই বেশী ছিলো যে, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক থেকে তৈমূরকে একেবারে উপদেষ্টার তালিকায় নিয়ে গেছে। এর আগে ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগের রাতে তৈমূরকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। দলীয় সূত্র মতে, জেলার কয়েকজন বিএনপি নেতা, শিল্পপতি, জামায়াত নেতা মিলে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে কেন্দ্রীয় শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করেছিলেন। তারা তারেক রহমানকে রাজি করে চেয়ারপার্সনকে দিয়ে নির্দেশ দেয়ান। অতীতে শহর বিএনপি নিয়ে পাল্টাপাল্টি কমিটি হয়েছিলো। এ দলেও কখনও আপন কখনও পর হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্য মতে, শহর বিএনপির পাল্টা কমিটির নেতৃত্বের আড়ালে ছিলেন মহানগর বিএনপির বর্তমান সভাপতি আবুল কালাম। আর সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল ছিলে শহর বিএনপির মুল কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তখন বিদ্রোহী কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন তারু সরদারের ছেলে নূরুল ইসলাম সরদার আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। বর্তমানে সাখাওয়াতের সাথে কালামের চরম দ্বন্দ্ব। তবে সে সময়ের প্রতিপক্ষ মূল কমিটির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল এখন কালামের সঙ্গে কমিটিতে আছেন। আবার ভাই সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে হুকুমের আসামী করলেও সিটি নির্বাচনে তৈমূর আলমকে সেই গিয়াসের সাথে দেখা গেছে।
এদিকে করোনার মতো ভয়াল পরিস্থিতিতেও রাজনৈতিক ল্যাং মারামারি বন্ধ নেই। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত থাকলেও ব্যতিক্রম রয়েছেন কয়েকজন। তবে তাদের নিয়ে তাদের দলগুলো তেমন উচ্ছাসিত নয়। বরং নিজ দলের নেতার সুনাম না করে উল্টো কথা বলছেন অনেকে। এরই মধ্যে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যম ব্যবহার করে নিজের কিংবা পরিবারের সদস্যদের গুণগান গাইছেন। অন্যজন কৃতিত্বপূর্ণ কাজ করলেও তার নাম ভুলেও নিচ্ছেন না।